যদি কাউকে এমন একটি পোকার নাম জিজ্ঞেস করা হয় যেটি প্রত্যেকের বাড়িতে রয়েছে, তাহলে বেশিরভাগের উত্তরই হবে তেলাপোকা বা আরশোলা। তেলাপোকা ঘৃণা করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ বিশেষ করে বাড়ির গৃহিণীদের কাছে এটি একটি বিরক্তির নাম।
আর হবে নাই বা কেন! ঘরের কোনায়, বাথরুমে কিংবা রান্নাঘরে বিচরণ করা এই পোকাটি ঘরের থালাবাসন ও গ্লাসে থাকা খাবার এবং পানির ওপর দিয়েও অবাধে হেঁটে বেড়ায়। এই খাবার আবার আমরা না বুঝে অনেক সময় খেয়েও ফেলি এবং নিজের অজান্তেই নানারকম রোগ জীবাণু নিজেদের শরীরে প্রবেশ করতে দেই। আজকের লেখায় আমরা জানবো খাবারে তেলাপোকা হেঁটে বেড়ালে তা আমাদের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর সে সম্পর্কে।
তেলাপোকার বৃত্তান্ত
চলুন শুরুতেই তেলাপোকা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসা যাক। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে তেলাপোকার আগমন আজ থেকে প্রায় তিনশো মিলিয়ন বছর আগে। আপনারা হয়তো জেনে অবাক হবেন, আমাদের বিশ্বে এখন প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রজাতির তেলাপোকা রয়েছে।
সাধারণত একেকটি তেলাপোকার ওজন তিরিশ গ্রামের মতো হয়ে থাকে। গাঢ় বাদামী বর্ণের এই পোকাটি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় লম্বায় দেড় সেন্টিমিটার হয়।
তেলাপোকা আবাস বিস্তারের জন্য অন্ধকার ও আদ্রতাবিশিষ্ট স্থান পছন্দ করলেও বাড়ির সব স্থানেই এটির আনাগোনা নজরে আসে। একারণেই বাড়িতে খুব আরশোলার উপদ্রব দেখা দিলে রান্না ঘরে তেলাপোকা বা ওয়াশরুমে তেলাপোকা দেখা যায়৷ আবার যদি এই পোকার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন খাবারের ওপর, সিংকের ভেতর, দরজায় চিপায় বা ডাইনিং টেবিলের নিচে তেলাপোকা হেঁটে বেড়াতে দেখা যায়।
তেলাপোকার প্রজনন
চলুন এবার জানা যাক তেলাপোকা কিভাবে প্রজনন করে ও বংশবিস্তার করে সে সম্পর্কে। তেলাপোকার জীবনচক্র সম্পর্কে গবেষণা করার পর দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী তেলাপোকা সেটির ডানা ছড়িয়ে দিয়ে বিপরীত লিংগের সংগীকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে মিলন সম্পন্ন করে।
তারপর স্ত্রী তেলাপোকার দেহে ক্যাপসুল তৈরি হয় যার ভেতর ডিম সংরক্ষিত থাকে। একেকটি ক্যাপসুলে থাকা ডিমের সংখ্যা ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটির মতো। এই ক্যাপসুলে থাকা ডিম থেকেই পরবর্তীতে তেলাপোকার জন্ম হয়৷ আশা করি সবাই তেলাপোকা কিভাবে ডিম পাড়ে সেটি বুঝতে পেরেছেন৷
এবার আসি তেলাপোকার জীবনচক্র নিয়ে৷ প্রতিটি তেলাপোকার জীবনচক্র তিন ধাপে বিভক্ত, যেগুলো হলো ডিম, নিম্ফ (ছোট তেলাপোকা) ও প্রাপ্তবয়স্ক তেলাপোকা। একেকটি তেলাপোকার প্রায় দেড় বছরের মতো বাঁচে।
এখন আপনাদের সবার মনে ঘুরতে থাকা একটি প্রশ্নের উত্তর দেই এবার। সেটা হলো তেলাপোকা মাথা ছাড়া কতদিন বাঁচে। আসলে এই পোকাটি যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করতে সক্ষম। এমনকি তেলাপোকা মাথা ছাড়াও দিন দশেকের মতো অনায়াসে বেঁচে থাকতে পারে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, যদি বাড়িতে খুব আরশোলার উপদ্রব হয়ে থাকে, তাহলে এটি তাড়ানোর জন্য ভালো মানের তেলাপোকা মারার ঔষধ ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই।
তেলাপোকার প্রিয় খাবার কি?
তেলাপোকা কি খায়?
এটি জিজ্ঞেস না করে জানতে চাওয়া উচিৎ তেলাপোকা কি খায়না! কারণ তেলাপোকা সর্বভুক ধরণের হওয়ায় এটি প্রায় সবই খায়।
তেলাপোকা যেকোনো ধরণের খাবার থেকে শুরু করে কাগজ, প্লাস্টিক, এমনকি চুল বা চামড়াও খেতে পারে। মূলত তেলাপোকার পাকস্থলীতে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়াই এটিকে যেকোনো ধরণের বস্তু হজম করিয়ে দেয়৷
তেলাপোকার ক্ষতিকর দিকঃ খাবারে তেলাপোকা হেঁটে বেড়ালে কি হয়?
বাড়ির রান্না ঘরে তেলাপোকা বা ডাইনিং টেবিলের নিচে তেলাপোকা দেখা গেলে কারোরই মাথা ঠিক থাকেনা। আবার অনেক সময় এমন হয় যে এই পোকা আমাদের প্লেটে বা বাটিতে রাখা খাবারের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ায়।
এটি দারুণ অস্বাস্থ্যকর তো বটেই, পাশাপাশি তেলাপোকার হেঁটে বেড়ানো খাবার খেলে সেখান থেকে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশংকা থাকে। তেলাপোকা ডায়রিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগের জীবাণুর বাহক। আবার যদি ভুলক্রমে তেলাপোকার হেঁটে বেড়ানো খাবার খেয়ে ফেলা হয়, তাহলে ফুড পয়জনিংয়েরও বড় আশঙ্কা থাকে।
তেলাপোকা দূর করার ঔষধ
আশা করি সবাই বুঝতে পারছেন, খাবারে তেলাপোকা হেঁটে বেড়ালে সেখান থেকে কত বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। একারণে তেলাপোকা তাড়াতে হলে অবশ্যই ভালো মানের তেলাপোকা দূর করার ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
তেলাপোকা দূর করার ঔষধ হিসাবে Cockroach Killing Bait Powder ব্যবহার করতে পারেন চোখ বন্ধ করে। তেলাপোকা ছোট হোক কিংবা বড়, এই ঔষধ সবচাইতে কম সময়ে তেলাপোকার বংশ নির্মূল করতে কার্যকরী। তাই একবার হলেও বাড়িতে এটি ব্যবহার করে দেখুন। ইনশাআল্লাহ নিরাশ হবেননা।