ছোট থেকে বড়- প্রত্যেকের সবচাইতে অপছন্দের পোকাগুলোর একটি হচ্ছে তেলাপোকা। কমবেশি সবার বাড়ির রান্নাঘরে, বাথরুমে বা স্টোররুমে বসবাসকারী এই পোকাগুলোর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে গেলে তা আমাদের দারুণ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই তেলাপোকা সম্পর্কে যে একটি তথ্য আমরা অনেকেই জানিনা, সেটি হচ্ছে তেলাপোকা মানুষকে কামড়াতে পারে। কি? আরো জানতে চান? আজকের লেখায় আপনারা জানতে পারবেন তেলাপোকার কামড় সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং একই সাথে তেলাপোকা কামড়ালে তা দ্রুত নিরাময় করতে কি করতে পারেন সে সম্পর্কে। আশা করছি সবাই লেখাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন।
তেলাপোকার ক্ষতিকর দিক
তেলাপোকা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমনঃ জার্মান, আমেরিকান, অরিয়েন্টাল ইত্যাদি ধরণের তেলাপোকা। এছাড়াও তেলাপোকার মতো দেখতে ছোট আকৃতির কিছু পোকাও এখন দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোকে সবাই চায়না তেলাপোকা নামে চেনে৷ বাংলাদেশে জার্মান তেলাপোকা হচ্ছে সবচেয়ে পরিচিত ধরণের তেলাপোকাগুলোর মধ্যে একটি। এগুলোর স্বাভাবিক আকার মাঝারি থেকে বড় হয়ে থাকে। এ পোকাগুলো গাঢ় বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। অন্যদিকে চাইনিজ তেলাপোকা হচ্ছে আকারে অন্যান্য তেলাপোকার চাইতেও ছোট কিছু তেলাপোকা।
তেলাপোকার ধরন যেমনই হোক, এই পোকার রয়েছে বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক। প্রথমত, যদি বাড়িতে তেলাপোকার সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে ঘরগুলো স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি নোংরা হয়। যা পরিষ্কার করার সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর। তাছাড়া বাড়ির যেসব ঘরে তেলাপোকার বসতি অনেক বেশি থাকে, সেসব ঘরে কেমন একটা দুর্গন্ধও পাওয়া যায়, যা দূর করতে বেশ ভুগতে হয়।
শুধু তাই নয়, তেলাপোকা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমাদের খাবারে কিংবা থালা-বাসনে যদি তেলাপোকা হেঁটে যায়, সেখান থেকে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়ায় ,এমনকি আমরা ডায়রিয়া কিংবা টাইফয়েডের মত রোগেও আক্রান্ত হতে পারি। আর যাদের হাঁপানি কিংবা এলার্জি জনিত স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে , তাদের দেহের কোনো স্থানে যদি তেলাপোকা হেঁটে যায়, তাহলে তাদের সেই সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
আবার শুধু স্বাস্থ্যের কথাই বলছি কেন, যখন তেলাপোকা উড়ে যায় তখন অনেকেই ভয় পান। তাই বাড়িতে তেলাপোকা থাকা ভয়ের কারণও বটে। মূলত এসব কারণে সবাই তেলাপোকা ঘৃণা করে থাকে।
তেলাপোকার কামড় সম্পর্কে জানুন
এখন আমি আপনাদেরকে তেলাপোকার কামড় সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য জানাবো, যেগুলো হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। আপনাদের সবার মনে একটি প্রশ্ন থাকে যেটি হলো ” আচ্ছা তেলাপোকা কি আদৌ কামড়ায়? “
এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ! তেলাপোকা কামড়ায়। কামড়ানোর জন্য তেলাপোকা মূলত রাতের সময়টিকে বেছে নিয়ে থাকে। এর কারণ হলো তেলাপোকার দিনের আলো খুব বেশি পছন্দ করে না। তাই তারা তাদের চলাচল ও খাদ্য সংগ্রহের জন্য রাতের সময়টিকে বেছে নিয়ে থাকে। এ কারণে তেলাপোকা যদি মানুষকে কামড়ায়, তাহলে রাতেই কামড়ে থাকে।
আবার তেলাপোকা কিন্তু মানুষের শরীরের সব স্থানে কামড়ায় না। কামড়ানোর জন্য তেলাপোকা এমন কিছু স্থানকে বেছে নেয় যেগুলোতে খাদ্য কণা লেগে থাকতে পারে। যেমনঃ মানুষের হাতের তালু, আঙ্গুল অথবা মুখ।
তেলাপোকা অত্যন্ত জেদি স্বভাবের একটি পোকা। যদি এটি কোথাও খাবারের সন্ধান পেয়ে থাকে, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সেই খাবার সংগ্রহ করা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তেলাপোকা তা সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যায়। মূলত এসব খাদ্যকণাই তেলাপোকাকে আকর্ষণ করে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে তেলাপোকা মানুষকে কামড় দিয়ে থাকে। একই সাথে বলে রাখা ভালো, শুধুমাত্র খাবারের লোভেই তেলাপোকা মানুষকে কামড় দিয়ে থাকে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে তেলাপোকা তার শরীরের ওজনের চাইতে ৫০গুণ বেশি শক্তি দিয়ে আমাদের কামড় দিতে পারে। একারণে তেলাপোকা কামড়ালে আপনি ব্যথা অনুভব করতে পারেন। তবে কতটুকু ব্যথা অনুভব করবেন সেটি আপনার ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।
এবার আসা যাক সাধারণ পোকার সাথে তেলাপোকার কামড়ের পার্থক্য কিভাবে করতে পারবেন সে বিষয়ে। সত্যি বলতে যখন তেলাপোকা কামড়ায়, তখন সে স্থানটি দেখতে অন্যান্য পোকা কামড়ালে যেমন হয় অনেকটা সেরকমই লাগে।
এ পোকা মানুষকে কামড়ানোর পর সে জায়গাটি লাল হয়ে ফুলে যায়। এই জায়গাটিতে সাধারণত চুলকানি হয়ে থাকে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা সাধারণত আক্রান্ত স্থানটি চুলকানোর অভিযোগ করে থাকেন।
সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারলে খুব তাড়াতাড়ি এ জায়গাটি সেরে যায়। তবে যদি কোনোভাবে কামড়ানোর জায়গাতে ইনফেকশন হয়ে যায়, তাহলে জায়গাটি আরো ফুলে ফোঁড়ার মতো হয়ে গিয়ে সেখানে পুঁজ দেখা দিতে পারে।
আমি জানি এখন আপনারা জানতে চাইবেন যে তেলাপোকা কামড়ানো বিপদজনক কিনা। সে প্রশ্নটির উত্তর দিয়ে দেই। আশার কথা এই যে তেলাপোকার কামড় সেভাবে বিষাক্ত নয়। এই পোকাড় কামড় খুব তাড়াতাড়িই সেরে যায়।