যেকোনো পোকামাকড়ের উপদ্রব আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। আর সেই পোকা যদি রক্তখেকো হয় তাহলে তো ব্যাপারটি আরো ভয়ঙ্কর, তাইনা? বলছিলাম ছারপোকার কথা। ছারপোকার নাম শোনেননি এমন মানুষ কিন্তু একজনও নেই। সবার কাছে এ পোকা এক আতঙ্কের নামও বটে। তাইতো যদি বাড়িতে এ পোকার উপদ্রব হয়, তাহলে সবাই এটি তাড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগে যান। আজকের লেখায় আপনাদেরকে জানাবো ছারপোকা সম্পর্কে কিছু তথ্য এবং ছারপোকা কিভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে।
ছাড়পোকা সম্পর্কে কিছু তথ্য
ছারপোকাকে ইংরেজিতে বেড বাগ বলা হয়। পৃথিবীতে ছারপোকার অনেক প্রজাতি থাকলেও আমাদের ঘরবাড়ি কিংবা অফিসে মূলত দুই প্রজাতির ছারপোকার আক্রমণ দেখা যায়, যেগুলো হচ্ছে সাইম্যাক্স ল্যাক্টুল্যারিয়াস এবং সাইম্যাক্স হেমিপেট্রাস। এগুলোর মধ্যে সাইম্যাক্স ল্যাক্টুল্যারিয়াস সব জায়গাতে তুলনামূলক বেশি দেখতে পাওয়া যায়। অপরদিকে নাতিশীতোষ্ণ অর্থাৎ ঠান্ডা ও গরম এর মাঝামাঝি আবহাওয়াতে সাইম্যাক্স হেমিপেট্রাস বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
তবে সাধারণত বেশিরভাগ ছারপোকাই এই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াই সবচাইতে বেশি পছন্দ করে। তবে তাপমাত্রা যদি খুব বেশি বেড়ে যায়, সেটি আবার ছারপোকার বেঁচে থাকার জন্য কষ্টকর। একুশ থেকে ছাব্বিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে ছারপোকারা সবচেয়ে ভালো মতো বেঁচে থাকতে পারে। মূলত এ কারণেই আমাদের দেশে ছারপোকার সংখ্যা এত বেশি। কারণ আমাদের দেশও নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা বিশিষ্ট দেশ।
এবার আসা যাক ছারপোকার দৈহিক গঠন নিয়ে। ছারপোকা আকৃতিতে বেশ ছোট। সাধারণত একটি ছারপোকা আকৃতিতে এক থেকে সাত মিলিমিটারের ভেতর হয়ে থাকে। এই পোকা সাধারণত কালচে খয়েরি রঙের হয়ে থাকে। ছারপোকা উড়তে পারেনা, একারণে এগুলো হেঁটেই চলাচল করে থাকে।
অন্যান্য পোকার সাথে ছারপোকার মূল পার্থক্য হচ্ছে এটি রক্ত পান করার মাধ্যমে জীবন ধারণ করে থাকে। আর রক্ত পান করার জন্য মূলত ছারপোকা স্তন্যপায়ী যে কোন প্রাণীকে বেছে নেয়। সাধারনত এই পোকা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে অথবা কোথাও বসে থাকে, তখন রক্ত পান করে। রক্ত পান করার জন্য এ পোকা মূলত রাতের সময়টুকু বেছে নিলেও প্রয়োজনে এটি কিন্তু দিনের বেলাও রক্ত পান করে।
ছারপোকার বেঁচে থাকার জন্য প্রতি ছয় থেকে দশ দিন পর পর রক্ত পান করতে হয়। তবে মজার বিষয় হলো রক্ত পান না করেও একেকটি ছারপোকা কিন্তু প্রায় তিন মাসের মত অনায়াসে বেঁচে থাকতে পারে।
ছারপোকার জীবনচক্র
এখন আমি আপনাদের জানাবো ছারপোকার জীবনচক্র সম্পর্কে। একেকটি স্ত্রী ছারপোকা উপযুক্ত পরিবেশ এবং অনুকূল তাপমাত্রা পেলে দৈনিক দুই থেকে আটটি ডিম পাড়তে পারে। এই ডিম থেকে মাত্র ছয় থেকে পনেরো দিনের ভেতরেই ছারপোকার বাচ্চা জন্ম নেয় এবং একেকটি ছারপোকার বাচ্চার পরিণত ছারপোকায় পরিণত হতে সময় লাগে সাত সপ্তাহের মত। শিশু থেকে পরিণত অবস্থায় যাওয়ার জন্য ছারপোকাকে মোট পাঁচটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয় এবং এটি প্রতিটি পর্যায়ের শেষে তার পুরাতন খোলস ত্যাগ করে।
ছারপোকা কত দিন বাঁচে? এ প্রশ্নটি অনেকে করে থাকেন। সাধারণত ছারপোকারা ছয় মাস থেকে এক বছর সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর চাইতে বেশি সময়েও বাঁচতে পারে।
ছারপোকা কিভাবে ছড়ায়?
চলুন লেখার এই পর্যায়ে জেনে নেয়া যাক বাড়িতে কিভাবে ছারপোকা ছড়ায় সে বিষয়ে। সাধারণত আমাদের বাড়িতে বিছানায় ছারপোকার উপদ্রব সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র বিছানাতেই নয়, সোফা কিংবা অন্যান্য ফার্নিচার এমনকি গাড়ির ফোমের সিটেও এটির উপদ্রব হতে পারে।
ছারপোকা সম্পর্কে অনেকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে এই পোকা হয়তোবা তেলাপোকার মত নোংরা পরিবেশে থাকে। তবে এ ব্যাপারটি সত্যি নয়। ছারপোকা ময়লা অথবা পরিষ্কার যেকোনো পরিবেশেই বসবাস করতে পারে। মোটকথা, যেখানে মানুষ রয়েছে এবং ছারপোকার খাদ্য অর্থাৎ রক্ত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানেই এটি বসবাস করে থাকে।
যেকোনো পুরনো আসবাবপত্র, ব্যাগ, কার্টন, বক্স কিংবা তোষক-জাজিমের মাধ্যমে ছারপোকা আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তাই যারা পুরাতন জিনিসপত্র ক্রয় করেন অথবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রায়ই চলাচল করে থাকেন ,তাদের বাড়িতে ছারপোকার আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
আবার যারা কম দামি হোটেলে থাকেন, সেসব হোটেলের বিছানাতেও ছারপোকা থাকার কারণে সেই ছারপোকা আপনার লাগেজে করে আপনার বাড়িতে উঠে আসতে পারে। তারপর এটি বংশবিস্তার করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে যায়।
বাড়িতে ছারপোকা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে সেটির মূল ঝুঁকি হলো এটি যেকোনো সময় মানুষকে কামড়াতে পারে। এই পোকার কামড় থেকে মানুষের এলার্জি জনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয় ,এই পোকা মারলে এক ধরনের উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এখন নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পারছেন বাড়িতে ছারপোকার উপদ্রব হলে মোটেও চুপ করে বসে থাকা যাবেনা।
এটুকুই ছিল ছারপোকা সম্পর্কে আজকের আলোচনা। আশা করি এই পোকাটি সম্পর্কে সবাই অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। সবার জন্য পরামর্শ থাকবে বাড়িতে ছারপোকার উপদ্রব দেখা দিলে অতিসত্বর সেটি দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।