বলতে পারেন কোন পোকাটি ঘরে থাকা কাঠের আসবাবপত্র কিংবা কাগজের সবচাইতে বড় শত্রু? আমি জানি এ প্রশ্নটির উত্তর সবাই একটি পোকারই নাম বলবেন, যেটি হলো উইপোকা। তেলাপোকা কিংবা ছারপোকার মতো যদি বাড়িতে একবার উঁইপোকা বংশবিস্তার করতে শুরু করে, তাহলে এই পোকার সংখ্যা কিন্তু সহজে কমেনা।
এখন সবার জীবনেই যথেষ্ট ব্যস্ততা থাকায় আমরা উইপোকা দমন পদ্ধতি হিসেবে এমন কিছু পদ্ধতি জানাতে চাই যেগুলো অনুসরণ করা খুব একটা কঠিন না হলেও এগুলোর মাধ্যমে বাড়ি থেকে উইপোকার উপদ্রব চিরতরে দূর করা সম্ভব। এ কারণে আজ আপনাদের সবার জন্য বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো সহজ উপায়ে বাড়ি থেকে উইপোকা দূর করার উপায় নিয়ে। আশা করছি এই লেখাটির সবার উপকারে আসবে।
উইপোকা সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য
উইপোকা তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে তো জানবোই, শুরুতেই চলুন উইপোকা সম্পর্কে একটু জেনে আসি৷ উইপোকা ছোট্ট আকৃতির দলবদ্ধ স্বভাবের একটি পোকা, যা কলোনি গঠনের মাধ্যমে আমাদের বাড়িতে বসবাস করে। আবাসস্থল হিসেবে উইপোকার পছন্দ স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া বিদ্যমান এমন কোনো জায়গা। এ কারণেই আপনার ঘরের পরিবেশ যদি অন্ধকার থাকে এবং সেখানে যদি আলো-বাতাস চলাচল তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং একইসাথে স্যাঁতসেঁতে ভাব বিরাজ করে, তাহলে সেখানে উইপোকার আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
উইপোকা থেকে কি কি ক্ষতি হয়?
গবেষকদের মতে, উইপোকার বিভিন্ন প্রজাতি সারা বিশ্বে প্রতিবছর যতটুকু ক্ষতি করে তা ৪০ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য। দলবদ্ধভাবে বসবাস করায় এই পোকা থেকে তুলনামূলক বেশিই ক্ষতি হয়। উইপোকার করা মূল ক্ষতি হলো-
- বাড়ির কাঠের আসবাবপত্র, বাঁশ দিয়ে বানানো বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট করা।
- আলমারি বা ড্রয়ারে থাকা কাপড়চোপড় কেটে ফেলা।
- বইখাতা, টাকাপয়সা কেটে নষ্ট করা।
- বিভিন্ন ফসলের জমি বা গাছপালায় আক্রমণ করে সেগুলোর ক্ষতি করা।
- বাড়ির মেঝে বা দেয়ালের ফাঁকফোকরে কলোনি তৈরি করার মাধ্যমে বাড়ির ভিত দুর্বল করে দেয়া।
উইপোকা দূর করার উপায় যা একশোভাগ কার্যকর
উইপোকা দূর করার উপায় হিসেবে আপনারা হয়তো ইন্টারনেটে বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতি দেখে থাকবেন। তবে সত্যি বলতে এই পদ্ধতিগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব একটা কার্যকরী হয় না। বরং আমার পরামর্শ হচ্ছে উইপোকা দূর করার জন্য এমন একটি ওষুধ ব্যবহার করুন যে ওষুধ ব্যবহার করলে উই পোকার হাত থেকে নিশ্চিতভাবেই নিস্তার পাওয়া সম্ভব।
কি নাম সেই ওষুধটির?
উইপোকা দূর করার ওষুধটির নাম হচ্ছে Kangyu Kill Insect Bed Bug.
ব্যবহারবিধি:
এই ওষুধটি দিয়ে উইপোকা ও ছারপোকার বংশ চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব। যে সব জায়গাতে উইপোকার বাসা আছে ওই জায়গাতে ঔষধ ছিটিয়ে দিতে হবে বা উইপোকার বাসার ভিতরে চাপ দিয়ে ওষুধ দিয়ে দিতে হবে। যদি দেয়ালে উইপোকার বাসা তৈরি করে সে ক্ষেত্রে হালকা করে বাসা ভেঙে উইপোকার চলাচলের জায়গাতে ঔষধ দিয়ে দিতে হবে। এতে করে উইপোকার গায়ে ওষুধ লাগবে এবং খাবে। এতে উইপোকা একে অপরকে সংক্রমিত করে মারা যাবে।
এভাবে ৭ দিন পরপর ৩ বার ব্যবহার করতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরে ১০ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
আপনারা বাজারে উইপোকা দূর করার বিভিন্ন ওষুধ দেখতে পাবেন। সেসব ওষুধের সাথে এই ওষুধের মূল পার্থক্য হচ্ছে এই ওষুধ ব্যবহারে সাইড ইফেক্ট বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
তবে সাইড ইফেক্ট নেই বলে ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশই নেই। কারণ সরাসরি চায়না থেকে আমদানিকৃত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন উইপোকা মারার ওষুধটি ব্যবহার করলে বাড়ি থেকে উইপোকার বংশ চিরতরে দূর করে ফেলা সম্ভব।
পরামর্শ ও করণীয় বিষয় গুলো
এবার আপনাদেরকে কিছু পরামর্শ দিচ্ছি যেগুলো ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি অনুসরন করলে আপনার বাড়িতে আর উইপোকার আক্রমণ হবে না। এগুলো হলো:
০১। আপনার বাড়ির পরিবেশ যেন স্যাঁতসেঁতে না থাকে এ ব্যাপারটি সবার আগে নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, শুকনো আবহাওয়া উইপোকা পছন্দ করেনা। এ কারণে যেন যথেষ্ট পরিমাণ আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে তার ব্যবস্থা করুন।
০২। অন্ধকার স্থান বরাবরই উইপোকার প্রিয় জায়গ। একারণে বাড়িতে যদি কোন পাইপ থেকে থাকে, সে পাইপ নিয়মিত পরিষ্কার করুন। একইসাথে খেয়াল রাখুন যাতে করে বাড়িতে থাকা কোনো পাইপে লিক না থাকে।
০৩। বাড়িতে থাকা কাঠের আসবাবপত্রগুলোর যত্ন নিন। নিয়মিত এগুলো মুছুন এবং প্রয়োজনে দোকান থেকে মেরামত করে নিন। এছাড়াও বাড়তি সতকর্তা হিসেবে এগুলো কিছুদিন পরপর রোদে দেয়ার চেষ্টা করুন।
০৪। আপনার বাড়ির প্রতিটি ঘরে ঠিকমতো নজর রাখুন। যেন উইপোকা আক্রমণ করতে শুরু করলে সাথে সাথে টের পেয়ে যান এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এটুকুই ছিলো আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করি আপনারা সবাই উইপোকা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।