প্রতিটি বাড়িতে সবাই যে পোকাটির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যান সেটির নাম হলো তেলাপোকা। তেলাপোকাকে আরশোলা নামেও অনেকেই চেনেন। সাধারণত গাঢ় বাদামি বর্ণের এই পোকা ছোট-বড়-মাঝারি ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। তেলাপোকা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। কারণ এটি বিভিন্ন ক্ষতিকর রোগের জীবাণু নিজের শরীরে বহন করে। আজকের লেখা থেকে আমরা জানবো তেলাপোকার মাধ্যমে আমাদের দেহে কি কি রোগ ছড়াতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
তেলাপোকা কি রোগ ছড়ায়?
আমরা চলে এসেছি আমাদের আজকের লেখার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশে। এখন আমরা জানবো তেলাপোকা কি রোগ ছড়ায় সে সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক –
০১। তেলাপোকা হেঁটে বেড়ানোর পর সেই খাবার খেলে সালমোনেলা ফুডপয়জনিং নামের এক ধরনের ফুড পয়জনিং হতে পারে। ফুড পয়জনিং বা খাবারের বিষক্রিয়া হলে পাতলা পায়খানা, জ্বর বা পেটব্যথার মতো সমস্যা হয়। এই সমস্যাটি আপাতদৃষ্টিতে সামান্য মনে হলেও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
০২। তেলাপোকা প্লেট বা খাবারের ওপর হাঁটার সময় এটির দেহে থাকা ব্যাকটেরিয়া রেখে যায়। যা পরবর্তীতে ডায়রিয়া রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
০৩। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা যদি কোনভাবে তেলাপোকার সংস্পর্শে আসেন, তাহলে তাদের শরীরে এলার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে। এক্ষেত্রে চোখ চুলকানো, নাক থেকে পানি পড়া, শরীর চুলকানো বা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
০৪। যারা হাঁপানির রোগী, তাদের জন্য তেলাপোকার সংস্পর্শ অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ তেলাপোকার লালা রস হাঁপানির সমস্যাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে তোলে। এ কারণে যখন তেলাপোকা কামড়ায়, তখন হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
০৫। টাইফয়েড নামক রোগের কথাতো সবাই শুনেছেন তাই না? এই রোগটি কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুঝুঁকিও বয়ে আনতে পারে। তেলাপোকার দেহে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া মানুষের দেহে প্রবেশ করলে সেখান থেকে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে।
বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য তেলাপোকা হুমকিস্বরূপ
বাড়িতে যখন হঠাৎ করে তেলাপোকা উড়ে যায় বা হেঁটে বেড়ায় তখন ছোট্ট শিশুরা ভয় পেয়ে যায়, তাই না? তেলাপোকা যে শুধুমাত্র শিশুদের ভয়ের কারণ তাই নয়, বরং এটি বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কেন জানেন?
আমি কিছুক্ষণ আগেই বলেছি যে তেলাপোকা হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। এই হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে তোলার ঝুঁকি শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। শুধু তাই নয় তেলাপোকার সংক্রমণে ফুড পয়জনিং, টাইফয়েড বা ডায়রিয়া ছোট বাচ্চাদের তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
শেষ কথা
যদি আপনার বাড়িতে তেলাপোকার উপদ্রব থাকে, তাহলে বাড়ির ছোট ও বড় সব সদস্যের কথা চিন্তা করে হলেও ভালো মানের তেলাপোকা মারার ঔষধ ব্যবহার করুন৷ মনে রাখবেন, ভালো মানের ঔষধ ব্যবহার না করলে তেলাপোকা পুরোপুরিভাবে কখনোই তাড়ানো সম্ভব নয়৷
এর পাশাপাশি খাবারে যেন তেলাপোকা বসতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য সবসময় রান্না করা খাবার ঠিকভাবে ঢেকে রাখুন৷ দরকার হলে উঁচু কোনো জায়গাতে রাখুন যাতে করে সেখানে তেলাপোকা যেতে না পারে। এর পাশাপাশি সবসময় ঘরবাড়ি যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন৷ নিয়মিত বাথরুম, রান্নাঘর, স্টোররুম এবং ঘরের কোণাগুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার রাখুন৷